
নন-এমপিও শিক্ষকদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়
আবু বকর ইয়ামিননন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের এককালীন আর্থিক অনুদান দিতে ১২৬ কোটি টাকা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
করোনাভাইরাসের কারণে প্রায় আড়াই মাস ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে সবচেয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফিসহ অন্যান্য খাত থেকে অর্থ আদায় করতে না পারায় বন্ধ রয়েছে এসব শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন। ঈদের বোনাসও হয়নি। এ অবস্থায় সারাদেশে প্রায় ২ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
অসহায় এসব শিক্ষকদের আর্থিক সহায়তায় উদ্যোগী হয়েই শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ প্রস্তাব পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র। প্রধানমন্ত্রীর সায় পেলেই মন্ত্রণালয় অর্থ বিভাগের অনুমতি চাইবে।
সূত্র জানায়, প্রধামন্ত্রীর কাছে পাঠানো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে স্কুল ও কলেজের জন্য আলাদা আলাদা থোক বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। প্রস্তাবে কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকদের জন্য ৮ হাজার অথবা ৫ হাজার কর্মচারীদের জন্য ৪ হাজার অথবা আড়াই হাজার টাকা করে দুটি বিকল্প রেখে প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রথম প্রস্তাবে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকদের জন্য এককালীন ৮ হাজার এবং কর্মচারীদের জন্য ৪ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে। এতে কলেজ পর্যায়ে ৮৪ হাজার ৮১৮জন শিক্ষককের জন্য প্রায় ৩৯ কোটি ৫৪ লাখ ৪ হাজার টাকা এবং ৩৪ হাজার ৭৬২ জন কর্মচারীর জন্য ১৩ কোটি ৯০ লাখ ৮ হাজার টাকা প্রয়োজন।
স্কুল পর্যায়ে ৬৬ হাজার ৫০৭জন শিক্ষকের জন্য ৫৩ কোটি ২০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা এবং ৫০ হাজার ৪৫৫ জন কর্মচারীর জন্য ২০ কোটি ১৮ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন।
এতে প্রথম প্রস্তাবে মোট টাকা প্রয়োজন ১২৬ কোটি ৩৪ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকদের জন্য এককালীন ৫ হাজার এবং কর্মচারীদের জন্য ২ হাজার ৫০০ টাকা চাওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় প্রস্তাবে মোট ৭৮ কোটি ৯৬ লাখ ৬৭ হাজার ৫০০ টাকা লাগবে।
জানা গেছে, প্রস্তাব দুটির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী যেটার অনুমোদন দিবেন সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের জন্য অর্থ বিভাগকে অনুরোধ করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রস্তাবে এ টাকা চাওয়ার যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, করোনাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন খাতে প্রনোদনা ঘোষণা করেছেন। টেকসই উন্নয়নের জন্য সমগ্র বিশ্বে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
এছাড়া কওমী মাদ্রাসার শিক্ষকদের জন্য এককালীন আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি ২৭৩০টি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষক কর্মচারীকে এমপিওভূক্তির আওতায় এনে তাদের বেতন ভাতা দেয়া শুরু হয়েছে।
এদিকে গত ২৩ মে দেশের সব জেলা প্রশাসকদের কাছে নন-এমপিও স্কুল কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের নির্ধারিত ছকে তালিকা চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিন বলেন, ‘নন-এমপিও শিক্ষকদের প্রনোদনা দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা প্রস্তাব পাঠিয়েছি। শিক্ষক কর্মচারীদের তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে।প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন স্বাপেক্ষে এ বাবদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হবে।'
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠন আর্থিক অনুদান দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এ সংকটকালীন সময় তারা
শিক্ষকদের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াজোঁ ফোরামের মুখপাত্র মো. নজরুল ইসলাম রনি বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকদের মোবাইল ব্যাংকিং নাম্বার চাওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আছে আমরা আবেদন করেছিলাম। সরকার আমাদের শিক্ষকদের ডাকে সারা দিয়েছেন। এতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।'
মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়া নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ৭ হাজারেরও বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ২ লাখ ৫৪২ জন।
ঢাকা/ইয়ামিন/টিপু
from Risingbd Bangla News https://ift.tt/2XbNZfP
0 comments:
Post a Comment