One can get information of Technology, Online income info, Health, Entertainment, Cooking & Recipe, Bye & Sale, Sports, Education, Exclusive news and many more in single bundle. ভান্ডার 24 থেকে আপনি পাচ্ছেন টেকনোলজি ইনফরমেশন, অনলাইনে ইনকাম ইনফরমেশন, হেলথ, এন্টারটেইনমেন্ট, কুকিং & রেসিপি, কেনা বেচা, স্পোর্টস, এডুকেশন, এক্সক্লুসিভ নিউজ ও আরো অনেক কিছু |

Friday, May 1, 2020

করোনার প্রাপ্তিই বেশি

করোনার প্রাপ্তিই বেশি

কাজী জহিরুল ইসলাম

এপ্রিলের ১ তারিখে আমি ‘করোনা’ শিরোনামে যে কবিতাটি লিখেছি তার মূল কথা ছিল, প্রকৃতি নিজেকে শুদ্ধ করার জন্য করোনা ফুল পৃথিবীতে পাঠিয়েছে এবং কবির চোখ করোনা-উত্তর পৃথিবীকে দেখছে হানাহানি, বিভেদ ও দাঙ্গামুক্ত।

ভালোবাসায় স্নাত অনিন্দ্য সুন্দর এক পৃথিবী।  পৃথিবীর বাতাস দূষণমুক্ত, শুদ্ধ আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে ততোধিক শুদ্ধ রোদের রেণু, অরণ্যচারী প্রাণীরা ফিরে পেয়েছে অবাধ ছুটে বেড়াবার অভয়ারণ্য, ডলফিনেরা ফারাও দ্বীপের পাথরে মাথা রেখে নির্ভয়ে রোদ পোহাচ্ছে।  করোনাকে পৃথিবীর শত্রু  নয়, বন্ধু হিসেবে দেখেছি আমার কবিতায়।

খুব ভয়ে ভয়ে তা ফেসবুকে প্রকাশ করি।  হয়ত হাজার খানেক খিস্তির বর্শা এক্ষুনি উড়ে আসবে আমার দিকে।  কিন্তু তা হলো না বরং হলো উল্টোটা। বাংলা ভাষার মানুষেরা আমার এই ধারণাকে পছন্দ করলেন এবং আমার অন্য যেকোনও কবিতার চেয়ে এই কবিতাটি অধিক প্রসংশিত হলো। মন্দটা সবাই বোঝে, কখনো কখনো ব্যক্তিগত প্রাপ্তি অথবা যা পাচ্ছি তা হারানোর ভয়ে আমরা প্রতিবাদ করি না। কিন্তু কেউ সত্যিটা বললে তাকে সমর্থন করি, কখনো প্রকাশ্যে, কখনো গোপনে। একজন কবি হিসেবে আমি আমার আত্মোৎসারিত পঙক্তি রচনা করি।  আমি কোনো গবেষক নই, বিজ্ঞানী নই, কিন্তু কবি হিসেবে আমার একটি ভিন্ন রকমের চোখ আছে।  সেই চোখে ছায়া ফেলে প্রকৃতি, সেই চোখ বৃষ্টিকে দেখে কান্না, সকালের রোদকে দেখে প্রেমিকার উচ্ছাস, বর্ষার বিলকে দেখে অভিমান, আরো কতো কি দেখে।  সাধারণের কাছে এ হয়ত অসুস্থতা।  এ অসুখ আমি সানন্দেই মেনে নিয়েছি।

এখন গবেষকেরা আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসছেন, নানান রকম তথ্য-উপাত্ত এবং যুক্তি দিয়ে দেখাচ্ছেন করোনায় যত মানুষের প্রাণহানি হয়েছে এবং হবে তার চেয়ে অনেক অধিক মানুষের প্রাণ বেঁচে যাবে পরিবেশ শুদ্ধ হবার কারণে। করোনাকালের সরাসরি প্রাপ্তিও কিন্তু কম নয়।  নিজের ঘরকেই আমরা বানিয়ে ফেলেছি অফিস, স্কুল, অডিটোরিয়াম, স্টুডিও আরো কত কি! আমার বাচ্চারা স্কুলে কোন কোন বাচ্চার সাথে বসে ক্লাস করে আমি এখন তা জানি কারণ রোজ আমিও ল্যাপটপে বা আইপ্যাডে ওর সঙ্গে বসি। ওকে ক্লাস করতে সাহায্য করি। শিক্ষকদের সাথে, শিশুদের সাথে, শিশুদের বাবা-মায়ের সাথে আমার দেখা হচ্ছে, আলাপ-পরিচয় হচ্ছে। 

আমি মনে করি এ-এক বিরাট প্রাপ্তি।  দিনের পুরোটা সময়জুড়ে আমার স্ত্রী-সন্তান আমাকে ঘিরে রেখেছে, তাদের অফুরন্ত সান্নিধ্য পাচ্ছি।  কখনো তো ওদের সাথে বসে আমরা মিটিং করি না, পরিবারের নানান বিষয়ে শিশুদের মতামত নিই না, এখন নিচ্ছি।  সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছে পরিবারের সকল সদস্য।  এতে করে বড়রা পাচ্ছে শিশুদের উচ্ছাস, আবেগ, সারল্য আর শিশুরা পাচ্ছে বড়দের উইজডম।

ভদ্রমহিলার নাম স্পুৎনিক কিলাম্বি, ভারতীয় ফ্রেঞ্চ।  যুগ যুগ ধরে প্যারিসে থাকেন।  তার সঙ্গে আমার দেখা আইভরিকোস্টে। আমি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের উপপ্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, স্পুৎনিক মিশনের রেডিও স্টেশনের ম্যানেজার। খুব সিগারেট খেত।  সেটা ২০০৫ সালের কথা।  একদিন সে জেনে ফেলে আমি কবিতা লিখি।

ব্যাস, আমার পেছনে লেগে গেল, অনুসিএফএম-এ আমাকে ইন্টারভিউ দিতেই হবে।  আমি বলি, দেখো, আমি ফ্রেঞ্চ জানি না, যেটুকু ইংরেজি জানি, তা দিয়ে দাপ্তরিক কাজ হয় কিন্তু সাহিত্য হয় না। আর মিডিয়ার সামনে লাইভ ইন্টারভিউ, ইম্পসিবল।  স্পুৎনিক বলে, এটা কোনো ব্যাপারই না।  আমি তো তোমার সাথে সিগারেট খেতে খেতে রোজ ইংরেজিতেই কথা বলি।  কখনো তো মনে হয়নি তুমি ইংরেজিটা কম জানো। স্পুৎনিক নাছোড়বান্দা। তো একদিন সকালে ২০ ফুট সি-কন্টেইনারে নির্মিত ওদের স্টুডিওতে গিয়ে বসে পড়ি। ইন্টারভিউ হয়ে গেল।  ইন্টারভিউর শেষে একটি বাংলা কবিতা পড়ি এবং তার কিছুটা অর্থ ইংরেজিতে করে শোনাই।  স্পুৎনিক আমাকে না জানিয়ে একটি বাংলা গান জোগাড় করে রেখেছিল, ইন্টারভিউ শেষে সেই বাংলা গানটা বাজিয়ে দিল। ফাটাফাটি ইন্টারভিউ হয়ে গেল।  ওখানে প্রচুর বাংলাদেশি মিলিটারি ছিল, তারা নিয়মিত অনুসি এফএম শুনতো।  দলে দলে মিলিটারিরা  আমাকে ফোন করছে, প্রশংসা করছে।  ওরা বেশি খুশি হয়েছে আমার জন্য এই দূর দেশের রেডিওতে একটি বাংলা গান শুনতে পেল বলে।

সেটা ছিল শুরু।  এরপর স্পুৎনিক অনেক বাংলাদেশি মিলিটারি কমান্ডারের ইন্টারভিউ নেয়। অনেক বাংলা গান প্রচার করে। আমার ইন্টারভিউটা যেহেতু লাইভ ছিল আমি শুনতে পারিনি, পরে স্পুৎনিক আমাকে কপি করে একটি সিডি দেয়।  আমি সেটা মাঝে মাঝে আমার গাড়িতে বাজাতাম।  একদিন ওকে জিজ্ঞেস করি, তুমি বাংলা গান কোথায় পেলে? আর আমার কবিতার সাথে গানটা দারুণ ম্যাচ করেছে। তুমি কি জেনে-বুঝেই গান নির্বাচন করেছ? স্পুৎনিক বলে, আরে ধুর, প্যারিসে আমার এক বাঙালি বন্ধু আছে মিমলু সেন।  ওর কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি।  তুমি ওর হাজব্যান্ডকে চিনবে, পবন দাস বাউল। মিমলু আমার খুব ভালো বন্ধু, তোমাকে ওর ফোন নাম্বার দেব, আলাপ করো। খুব ভালো মেয়ে। স্পুৎনিক আমাকে মিমলু সেনের ফোন নাম্বার দেয় কিন্তু আমি তা হারিয়ে ফেলি। আবিদজানের আশ্বিনি সৈকতে শুয়ে শুয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পবন দাস বাউলের একটি গানই শুনেছি, ‘তোমার দিল কি দয়া হয় না’। শুনতে শুনতে আধ্যাত্মিকতার এক গভীর ঘোরের মধ্যে ডুবে গেছি, ডুকরে কেঁদেছি।

স্পুৎনিক ছিল বোহেমিয়ান টাইপের নারী। পোশাক আশাকেও কোনো যত্ন ছিল না।  যা খুশি পরত।  পুরোপুরি উড়নচণ্ডী যাকে বলে।  একদিন ও চাকরি ছেড়ে চলে যায়।  মিমলু সেনের নাম্বার আর জোগাড় করা হয়নি। নামটাও ভুলে গিয়েছিলাম। এখন করোনার কারণে গৃহে অন্তরীণ থাকার কারণে প্রতিদিন নানান রকম ফেসবুক লাইভে অংশ নিচ্ছি। দেখছি অন্যদের লাইভ প্রোগ্রামগুলো।  প্যারিস থেকে আবু জুবায়ের একটি লাইভ করে প্রতিদিন।  বেশ অনেকদিন আমিও যোগ দিয়েছি। ২৭ এপ্রিল তার অনুষ্ঠানে ছিল পবন দাস বাউল।  কিন্তু পবন দাসের ছবির নিচে নাম লেখা মিমলু সেন।  আর সাথে সাথেই বিদ্যুচ্চমকের মতো ঝকমক করে জ্বলে উঠল ১৫ বছর আগের স্মৃতি।  মিমলু সেন, নামটি স্মৃতির আয়নায় খুব উজ্জ্বল একটি ছায়া ফেলল কিন্তু আমি কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না স্পুৎনিক কিলাম্বির নাম।

ফেসবুক ঘাটতে শুরু করি। পেয়ে যাই মিমলুকে। ম্যাসেস পাঠাই।  নিউ ইয়র্কে তখন রাত বারোটা, প্যারিসে ভোর ছয়টা। ঘুম থেকে উঠে দেখি মিমলু সেনের বেশ বড়সড় উত্তর। সেই উত্তর আমাকে আনন্দ দিল বটে তবে তা কেবলই মুহূর্তের জন্য। মিমলু জানালো, হ্যাঁ, ও আমার খুব আপন একজন মানুষ, স্পুৎনিক কিলাম্বি, পাঁচ বছর আগে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।  আমার খুব আশা ছিল মিমলুর মাধ্যমে স্পুৎনিককে খুঁজে পাবো।  হলো না। এই যে মিমলু সেনকে পেলাম, পবন দাস বাউলকে পেলাম, স্পুৎনিকের এই পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোনো পৃথিবীতে ভ্রমণে যাওয়ার খবর পেলাম, এই প্রাপ্তিগুলো কি কম পাওয়া।

আরো পেয়েছি, আশির দশকের কবি রেজাউদ্দিন স্টালিনের সাথে আমার নিবিড় সখ্য ছিল।  কিন্তু দূরত্ব, দীর্ঘ নীরবতায়, তা প্রায় বিচ্ছিন্নই হয়ে গিয়েছিল। এই করোনাকালে তার সঙ্গেও ভার্চুয়াল যোগাযোগ গড়ে উঠেছে এবং মনে হচ্ছে আবার সেই আগের দিনগুলোতেই ফিরে গেছি, যখন আমাদের ‘তারুণ্য’  ছিল।

হলিসউড, নিউইয়র্ক। ২৮ এপ্রিল ২০২০। 

লেখক: কবি, কথাসাহিত্যিক, জাতিসংঘে কর্মরত

 

/সাইফ/



from Risingbd Bangla News https://ift.tt/35upVar
Share:

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts

Recent Posts

Unordered List

Text Widget

Pages

Blog Archive

3i Template IT Solutions. Powered by Blogger.

Text Widget

Copyright © ভান্ডার 24 | Powered by 3i Template IT Solutions