
সিল্ক স্মিতা: ঝলমলে তারার মৃত্যু রহস্য
বিনোদন ডেস্কভারতের দক্ষিণী সিনেমার অন্যতম আলোচিত অভিনেত্রী সিল্ক স্মিতা। একের পর এক সাহসী এবং খোলামেলা দৃশ্যে অভিনয় করে দর্শকের মাঝে বেশ সাড়া জাগিয়েছিলেন। নিজেকে ‘সেক্স সিম্বল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন খুব অল্প সময়ে। তবে তার জীবনের গল্পটা সিনেমার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
সিল্ক স্মিতার প্রকৃত নাম বিজয়ালক্ষ্মী বাড়লাপতি। জন্ম ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে। আর্থিক অনটনের কারণে চতুর্থ শ্রেণিতেই লেখপড়া বন্ধ হয়ে যায়। ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখার আগে মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। তাকে সিনেমায় নিয়ে আসেন পরিচালক বিনু চক্রবর্তী। নাম বদলে রাখেন স্মিতা।
১৯৭৮ সালে কন্নড় ভাষার ‘বেড়ি’ সিনেমার মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রাখেন এই অভিনেত্রী। পরের বছর ‘বেদিকাচক্রম’ সিনেমার মাধ্যমে রাতারাতি আলোচনায় চলে আসেন। এই সিনেমায় তার চরিত্রের নাম ছিল সিল্ক। এরপর থেকেই ‘সিল্ক স্মিতা’ নামে তিনি পরিচিতি পান।
আবেদনময়ী হওয়ায় ১৭ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে ৪৫০টির বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন সিল্ক স্মিতা। কমল হাসান-শ্রীদেবী অভিনীত হিন্দি সিনেমা ‘সাদমা’তেও তাকে দেখা গেছে।
আইটেম গানে দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন সিল্ক। ‘বেদিকাচক্রম’, ‘জাস্টিস রাজা’, ‘কিরাথাম’, ‘আন্থম’, ‘মাফিয়া’, ‘লকআপ ডেথ’, ‘জেন্টলম্যান সিকিউরিটি’, ‘কার্মা’ প্রভৃতি সিনেমায় কোমর দুলিয়ে দর্শক হৃদয় জয় করেছেন। তার জনপ্রিয়তা এতোটাই তুঙ্গে ওঠে যে, প্রতিদিন তিন শিফটে কাজ করতে হয়েছে। প্রতিটি আইটেম গানের জন্য নিতেন ৫০ হাজার রুপি। যা সে সময়ের জন্য সর্বোচ্চ। দক্ষিণী সিনেমার সুপারস্টাররা পর্যন্ত তার সিনেমায় একটি আইটেম গানের জন্য সিল্কের কাছে ধর্না দিতেন। এই তালিকায় রজনীকান্ত, কমল হাসান, চিরঞ্জীবীও আছেন।
এতো আলো ঝলমল যার জীবন, সে কিন্তু ব্যক্তি জীবনে আত্মকেন্দ্রীক ছিলেন। বন্ধুর সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। অল্পতেই রেগে যেতেন। সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করতেন। এজন্য অনেকে তাকে অহঙ্কারী মনে করতেন। তবে তিনি সময় মতো শুটিং সেটে হাজির হতেন। ছিলেন দায়িত্বশীল। তবে ভক্তদের কাছে তিনি ছিলেন শিশুসুলভ।
সিল্কের হাতে যখন অঢেল টাকা এবং ইন্ডাস্ট্রিতে দারুণ প্রভাব তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজেই প্রযোজক হবেন। প্রথম দুই সিনেমা প্রযোজনা করতে গিয়ে প্রচুর অর্থ খরচ করে ফেলেন তিনি। কিন্তু সেগুলো বক্স অফিস ব্যর্থ হয়। মনে মনে জেদি হয়ে ওঠেন সিল্ক। শুরু করেন তৃতীয় সিনেমা। কিন্তু এবার টাকায় টান পড়ে। ফলে সিনেমাটা আর শেষ করতে পারেননি। এতে মানসিকভাবে ভীষণ ভেঙে পড়েন। আর্থিক অনটনে বিষণ্ন হয়ে পড়েন।
১৯৯৬ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আত্মহত্যা করেন সিল্ক। নিজ বাড়ির সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। তার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি। জানা যায়, মৃত্যুর কারণ হিসেবে একটি সুইসাইড নোট লেখে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে তিনি লেখেন, একের পর এক জীবনে ব্যর্থতা এবং হতাশার কারণে মৃত্যুকেই মুক্তির পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, সিল্কের ক্যারিয়ার তখনও সচল ছিলো। অভিনয়ের অফারও পাচ্ছিলেন। তাহলে হঠাৎ এতোটা বিষণ্ন কেন হলেন তিনি? মূল কারণ আজও অজানা।
২০১১ সালে সিল্ক স্মিতার জীবন অবলম্বনে মিলন লুথিয়া নির্মাণ করেন ‘দ্য ডার্টি পিকচার’। হিন্দি ভাষার এই সিনেমাটিতে সিল্কের চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন বিদ্যা বালান। সিনেমাটি বেশ দর্শকপ্রিয়তা পায়।
ঢাকা/মারুফ/তারা
from Risingbd Bangla News https://ift.tt/2Zu4FyU
0 comments:
Post a Comment