ওজন নিয়ন্ত্রনে ডায়েটিং বা ব্যায়াম
করতে অনেকেরই আলসেমি। কিন্তু
আপনি কি জানেন যে যদি আপনার দৈনন্দিন
খাদ্য তালিকা যদি খুব বেশী ফ্যাটি না হয়
এবং আপনি একদম শুয়ে-বসে থাকা লাইফ
স্টাইলে অভ্যস্ত না হন, তাহলে শুধুমাত্র কিছু
বদঅভ্যাস এড়িয়ে চলতে পারলে আপনার ওজন
না কমলেও অন্তত নিয়ন্ত্রনে থাকবে?
এড়িয়ে চলুন এই সব অভ্যাস-
1. সকালের নাস্তা বাদ দেওয়াঃ সকালের
নাস্তা বাদ দিলে আপনি মোটা হবেন
দুটো কারণে। প্রথমত, সকালে আপনার শরীর
প্রায় ৮-১০ ঘন্টা না খাওয়া অবস্থায় থাকে।
সকালের নাস্তা বাদ দিলে আপনি ক্ষুধার্ত
থাকবেন এবং সেটা ব্যালেন্স করার জন্য
শরীর সারাদিন আপনার ক্ষুধার
অনুভূতি চাঙ্গা রাখবে। দ্বীতিয়ত, সকালে যখন
পেট খালি থাকবে, শরীর সেটাকে ব্যালেন্স
করার জন্য আপনার মেটাবলিসম এর হার
কমিয়ে ফেলবে। সুতরাং সারাদিন যা খাবেন
তা ফ্যাট হিসেবে জমা হবে শরীরে।
2. অনেক ক্ষন
না খেয়ে থাকাঃ মোটারা যে ভুলটা করেন
তা হলো, প্রয়োজনের চেয়েও কম খাওয়া ও
দীর্ঘক্ষন না খেয়ে থাকা। দীর্ঘক্ষন যদি পেট
খালি থাকে বা আপনি যদি অতিরিক্ত কম খান,
শরীরও তো কম চালাক নয়, সেও মেটাবলিসম
এর হার কমিয়ে ফেলে। সুতরাং, মোটা হলে কম
না খেয়ে তিন বেলা পর্যাপ্ত খান।
তিনবেলা খাবারের
মাঝে মাঝে খিদে পেলে ফল
বা সবজী বা লো ক্যালরি ফুড খান।
আপনাকে বুঝতে হবে যে খালি পেটে দীর্ঘপক্ষন
থাকলে শরীরের কাজ কমে যায়। বরং ২
ঘন্টা পর পর অল্প কিছু খেলে শরীরের অনেক
শক্তি খাবার হজম করতে ব্যয় হয়ে যায় (ব্যয়
না হলে এই শক্তি চর্বিতে পরিণত হয়ে আপনার
শরীরে জমা হত) আর পরবর্তী বেলায় আপনার
বেশী খেয়ে ফেলার ইচ্ছাটাকেও দমন
করে ফেলে।
3. হাটতে হাটতে খাওয়াঃ কিশোর
বয়সে বেশিরভাগ ই মানুষ যখন তখন ফ্রীজ
খুলে কিছু না কিছু বের করে খায়
অথবা আসতে যেতে ডাইনিং টেবিলে রাখা খাবার
বা তরকারি থেকে কিছু না কিছু অংশ
মুখে তুলে খায়। তাদের বর্ধিষ্ণু শরীরের
প্রয়োজনেই তারা এটা করে থাকে। কিন্তু
অনেকেরই বড় হওয়ার পরেও এই অভ্যাস
রয়ে যায়। এখানে দুইটা বিস্কুট,
ওখানে কয়েকটা বাদাম, এক পিস কেক,
অর্ধেকটা চকলেট বার, ১ গ্লাস শরবত, ১
প্যাকেট চিপস- শুনতে মনে হয় কিছুনা, কিন্তু
একসঙ্গে যোগ করলে এভাবে আপনি কয়েকশ
ক্যালরি অতিরিক্ত খেয়ে ফেলেন।
4. ভাত খাওয়াকে আবশ্যক
মনে করাঃ ভেতো বাঙ্গালীর কাছে ভাত
একটি আবশ্যকীয় বস্তু। দেখা যায়,
শপিং করতে গিয়ে একটা বার্গার
খেয়ে এসেছি, বাসায় এসে খাওয়ার টাইম এ
আবার টেবিল এ বসে গেলাম। আমরা গনায়
ধরছি না কিন্তু খেয়ে কিন্তু ফেললাম আসলে ৪
বেলা। সুতরাং এই অভ্যাস পরিত্যাগ করুন।
প্রথম প্রথম কষ্ট হলে, টেবিল এ বসুন। কিন্তু
ভাত না খেয়ে কিছু সব্জী আর ছোট এক পিস
মুরগী বা মাছ খেয়ে উঠে যান।
5. অন্যমনস্ক ভাবে খাওয়াঃ অনেকের অভ্যাস
আছে টিভি দেখতে দেখতে খাওয়া। খাওয়ার
সময় মাথায় রাখতে হবে যে- “আমি এখন
খাচ্ছি”; অন্যমনস্ক ভঙ্গীতে খেলে,
আপনি টেরই পাবেন না যে কখন আপনার
হাতের/প্লেটের সবটুকু খেয়ে ফেলেছেন। একই
কারণে পার্কে হাটতে হাটতে বা হাতে প্যাকেট
নিয়ে শপিং করতে করতে খাবেন না।
এমনো দেখা গিয়েছে যে এভাবে খেলে, মানুষ
অনেক সময় সে যে হাটতে হাটতে খেয়েছে-এই
কথাটুকুও ভুলে যাও।
সুতরাং সে সারাদিনে কি কি খেলাম বা কত
ক্যালরি খেলাম- সেই হিসাব
মিলাতে গিয়ে দুই একটা আইটেম বাদ
দিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে সে হতাশ
হয়ে পরে যে কিছু না খেয়েই
আমি মুটিয়ে যাচ্ছি। সুতরাং,
খাওয়াটা কে সবসময় একটা কাজ মনে করুন।
সুন্দর করে এক জায়গায় বসে খান। খাওয়ার
প্রতি মনযোগ, খাওয়ার
স্মৃতিটাকে মস্তিষ্কে গভীর
ভাবে গেথে ফেলে আপনার সারাদিনের
খাওয়ার অভ্যাস কে নিয়ন্ত্রন করবে।
6. সরাসরি প্যাকেট
থেকে খাওয়াঃ সরাসরি চিপস, পপকর্ন
বা বিস্কিটের প্যাকেট নিয়ে বসেছেন
তো ডুবেছেন। কখনোই হিসেব রাখতে পারবেন
না যে কতটুকু খেলেন। দুটো বিস্কিট
খেতে চেয়ে দেখা যাবে যে ৫টা বিস্কিটের
পুরো প্যাকেট খেয়ে ফেলেছেন। যতটুক খাবেন,
সুন্দর করে একটা পিরিচে ঢালুন, এইবার
প্যাকেট টা মুড়িয়ে জায়গামত গুছিয়া রাখুন।
হয়েছে...এইবার খান।
7. দ্রুত খাওয়াঃ ১৮শ শতকের বিখ্যাত ডাক্তার
জনসনের মতে, যে কোন খাবার ৩২ বার
চিবিয়ে খাওয়া উচিত। ৩২ বার না চিবালেও
দ্রুত খাওয়া শেষ করা যে উচিত না, তা আধুনিক
বিজ্ঞানীরাও মানেন। কেননা খাবার
খাওয়ার পর, আপনি যে খেয়েছেন- এই সিগনাল
মস্তিষ্কে যেতে কিছু সময় লাগে। মস্তিষ্ক
সিগনাল পাওয়ার পরে ক্ষুধার
অনুভূতি কমিয়ে দেয়। আপনি যদি দ্রুত
খাওয়া শেষ করে ফেলেন, সিগনাল
তখনো মস্তিষ্কে পৌছাবে না। সুতরাং আপনার
ক্ষুধার অনুভূতি তখনো থাকবে এবং আপনি দ্রুত
খেলেও বেশী খেয়ে ফেলবেন।
8. পানি কম খাওয়াঃ দিনে ৮ গ্লাস
পানি না খেলে শরীরে পানিশুণ্যতা দেখা দেয়।
পানিশুণ্য অবস্থায় শরীর ক্লান্ত
হয়ে পরে এবং ক্ষুধার অনুভূতি জাগ্রত হয়।
ফলে মানুষ তখন খাবারের দিকে হাত বাড়ায়
অথচ যার বদলে তার দরকার ছিলো শুধু পানির।
9. কম ঘুমানোঃ গবেষনা দ্বারা এটা এখন
রীতিমত প্রমাণিত যে, ওজন
নিয়ন্ত্রনে রাখতে হলে আপনাকে রাতে ৬
ঘন্টা ঘুমাতেই হবে। রাতে পর্যাপ্ত
না ঘুমালে তা “করটিসল” হরমোনের
নির্গমনের উপর প্রভাব ফেলে। আর মানুষের
ক্ষুধার অনুভূতি নিয়ন্ত্রন হয় এই হরমোনটির
দ্বারাই। তাছাড়াও গবেষনায়
দেখা গিয়েছে যে, রাতে কম
ঘুমালে শরীরে ফ্যাট স্টোর ও বেশী হয়।
10.
রাতে দেরিতে খাওয়াঃ আমরা বাঙ্গালীরা সাধারণত
১০টা-১১টায় খাই, আর শুয়ে পরি ১২ টায়।
একবার খেলে, খাবার হজম হতে দুই
ঘন্টা লাগে। তার আগেই শুয়ে পরলে, ঘুমন্ত
অবস্থায় শরীরের মেটাবলিসম ধীর হয়ে যায়।
ফলে রাতের খাওয়াটা ফ্যাট
হিসেবে শরীরে জমা হয়। ঠাট্টা করছি না,
এটি গবেষনা দ্বারা প্রমাণ করেছেন
নর্থোয়েস্টার ইউনিভার্সিটির
গবেষকেরা যা প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অফ
অবেসিটি
0 comments:
Post a Comment