One can get information of Technology, Online income info, Health, Entertainment, Cooking & Recipe, Bye & Sale, Sports, Education, Exclusive news and many more in single bundle. ভান্ডার 24 থেকে আপনি পাচ্ছেন টেকনোলজি ইনফরমেশন, অনলাইনে ইনকাম ইনফরমেশন, হেলথ, এন্টারটেইনমেন্ট, কুকিং & রেসিপি, কেনা বেচা, স্পোর্টস, এডুকেশন, এক্সক্লুসিভ নিউজ ও আরো অনেক কিছু |

Saturday, November 30, 2019

দিনে মানুষ রাতে নেকড়ে

দিনে মানুষ রাতে নেকড়ে

শাহিদুল ইসলাম

সাধারণ একজন মানুষ। দিনের আলোয় আর দশটা মানুষের মতই তার সব কর্মকাণ্ড। কিন্তু সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে তার আচরণে পরিবর্তন ঘটতে থাকে। রাতের গভীরতা যত বাড়ে ততই গভীর রহস্য ভর করে তার মনোজগতে এবং শরীরে। নিরীহ মানুষের খোলস পাল্টে সে হয়ে ওঠে হিংস্র নেকড়ে।

রাত যত বাড়ে তার শরীরে জান্তব প্রবল শক্তি ভর করে। এই জান্তব শরীর ঠান্ডা করতে তখন তার চাই গরম রক্ত। ফলে সামনে যা পায় তাই সে তীক্ষ্ম নখ আর ধারালো দাত দিয়ে ফালা ফালা করে ফেলে। একসময় রাত ঢলে পড়ে ভোরের কোলে। ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ে নেকড়ে মানব। পরিবর্তন ঘটতে থাকে তার অবয়বের। নেকড়ে থেকে সে আবার পূর্ণাঙ্গ মানুষ হয়ে ওঠে। তখন রাতের কথা বেমালুম ভুলে যায় সে। অপেক্ষা করতে থাকে আরও একটি রাতের। আর সেই হতভাগ্য শিকার? তার দেহ রূপ নেয় আরেকটি নেকড়ের।

ওপরের ভীতিজাগানিয়া মানবরূপী নেকড়ের বর্ণনা আমরা সচরাচর পশ্চিমা সিনেমায় দেখে অভ্যস্ত। এই মানবরূপী নেকড়েকে পশ্চিমা দুনিয়া নানান নামে ডাকলেও আমাদের অঞ্চলে তারা ‘মায়া নেকড়ে’ নামেই পরিচিত। আমাদের কাছে এটি হলিউডি সিনেমার লোক আকৃষ্ট করা কৌশল মনে হলেও পশ্চিমা দুনিয়ার হাজারো মানুষ মায়া নেকড়ের এই কাহিনী সত্যি বলেই বিশ্বাস করে। শুধু বিশ্বাস করে বললে ভুল হবে, অনেকে নিজেকে মায়া নেকড়ে বলে দাবিও করে!

ফলে শত শত বছর ধরে পশ্চিমা দুনিয়ায় গল্প-উপন্যাস আর লোকগাঁথায় মায়া নেকড়ের উপস্থিতি রয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপের প্রায় সকল নেকড়ে অধ্যুষিত এলাকায় মায়া নেকড়ে নিয়ে নানান কাহিনী প্রচলিত আছে।

মায়া নেকড়ের বর্ণনা সর্বপ্রথম পাওয়া যায় ইংরেজি আদি মহাকাব্য ‘গিলগামেশ’-এ। তবে সেখানে ভাসা ভাসা বর্ণনা ছিল। মায়া নেকড়ের বিষদ বর্ণনা পাওয়া যায় গ্রিক রূপকথায়। গ্রিক দেবতা জিউসের অভিশাপে লাইসিয়ান নামক এক ব্যক্তি নেকড়েতে পরিণত হয়েছিল। কারণ লাইসিয়ান জিউসকে মরা মানুষের দেহ দিয়ে খাবার তৈরি করে খাইয়েছিলেন।

নরওয়ের লোকগাঁথায়ও মায়া নেকড়ের বর্ণনা পাওয়া যায়। রূপকথার বর্ণনা অনুযায়ী এক পিতা এবং সন্তান দুজনেই এমন একটি নেকড়ের চামড়া তৈরি করেছিল গায়ে জড়ালে তারা নেকড়েতে পরিণত হতো।   

রূপকথা ঘুরে কালে কালে পৃথিবীর বহু মানুষ নিজেকে মায়া নেকড়ে বলে দাবি করেছে। অনেক হতভাগ্যকে মায়া নেকড়ে সন্দেহে মেরেও ফেলা হয়েছে। ১৫২১ সালে ফ্রান্সের পায়ার বারগট এবং মাইকেল ভারদুন নামক দুই ব্যক্তি নিজেদের মায়া নেকড়ে বলে দাবি করে। তারা একের পর এক নারী-পুরুষ এবং পোষা প্রাণী হত্যা করতে থাকে। অবশেষে তারা ধরা পড়ে। শাস্তি হিসেবে তাদের উভয়কে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়। কারণ বিশ্বাস করা হয় মায়া নেকড়েকে আগুনে পুড়িয়ে মারলে তারা আর পুনরায় জন্মলাভ করতে পারবে না। 

মায়া নেকড়ের বিখ্যাত কাহিনীটি ঘটে জার্মানীতে। ১৫ শতকের এই কাহিনী জার্মান লোকগাঁথার অবিচ্ছেদ্য অংশ। পিটার স্টব নামক এক জার্মান নির্বিচারে মানুষ হত্যা করতে থাকে। এছাড়া সে অত্যন্ত যন্ত্রণা দিয়ে অন্য প্রাণীদেরও মারতে থাকে। কিছুদিন পর পিটার ধরা পড়ে যায়। তাকেও যথারীতি আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। যদিও পিটারের এই হত্যাকাণ্ডকে অনেকে তৎকালীন শাসকদের ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তবে রূপকথায় মায়া নেকড়ের যেমন বর্ণনা থাকুক না কেন, বিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা। তারা মানুষের এই নেকড়ে হিসেবে দাবি করাটা এক ধরনের রোগ হিসেবে সাব্যস্ত করে। রোগটির নাম হাইপারট্রিকোসিস বা ওয়্যার উলফ সিন্ড্রোম। এটি মূলত হরমোনের তারতম্যজনিত অসুখ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে অস্বাভাবিকভাবে চুল গজাতে থাকে। স্বাভাবিকভাবে যেসব স্থানে চুল জন্মায় না সেসব স্থান চুলে ঢেকে যায়। অনেকে এই সমস্যা নিয়েই জন্ম নিতে পারে আবার অনেকের ক্ষেত্রে পরিণত বয়সে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। আক্রান্ত রোগীর দেহ ধীরে ধীরে অনেকটা নেকড়ে বা উলফের মত হয়ে যায়।

তবে হাইপারট্রিকোসিস রোগে আক্রান্ত চুলের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ছাড়া তার শরীরে নেকড়ের অন্য কোনো উপসর্গ নেই। মানুষ বা অন্য প্রাণী হত্যা করা তো অনেক দূরের কথা। প্রাচীনকালে এমন কোন ব্যক্তিকে নিয়েই হয়তো শুরু হয়েছিল মায়া নেকড়ের এমন কাল্পনিক ব্যাখ্যা।

সম্প্রতি বাংলাদেশেও এমন একজন রোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। বিরল রোগ হাইপারট্রিকোসিস বা ওয়্যার উলফ সিন্ড্রোমে আক্রান্ত বিথী নামের এই নারীর চিকিৎসা চলছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে।

মায়া নেকড়ে ইউরোপের রূপকথা আর হলিউডি সিনেমার জনপ্রিয় উপকরণ হলেও খোদ ইউরোপ-আমেরিকায় এই মানুষরূপী নেকড়ে আজও কেউ স্বচক্ষে দেখেছে বলে দাবি করেনি। তবুও ভয়ঙ্কর লৌকিক ধারণা আর কুসংস্কারে দিব্বি বেঁচে রয়েছে এই কাল্পনিক চরিত্র। মানুষের মনে এক চিরাচরিত ভয় হয়েই মায়া নেকড়ের অস্তিত্ব টিকে রয়েছে হাজার বছরের বেশি সময় ধরে। কাজীর গরু যেমন কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই। মায়া নেকড়েও ঠিক তাই। গল্পের ঝুলিতেই তার ঘোরা ফেরা।

 

ঢাকা/তারা



from Risingbd Bangla News https://ift.tt/2R59CM8
Share:

0 comments:

Post a Comment

Popular Posts

Recent Posts

Unordered List

Text Widget

Pages

Blog Archive

3i Template IT Solutions. Powered by Blogger.

Text Widget

Copyright © ভান্ডার 24 | Powered by 3i Template IT Solutions