
২৯ বছরেও হয়নি স্মৃতিসৌধ
মাহমুদুল হাসান মিলনগণতন্ত্র উদ্ধারে স্বৈরাচার এরশাদ সরকার বিরোধী গণআন্দোলনে শহীদ ফিরোজ-জাহাঙ্গীরের মৃত্যুবার্ষিকী আজ বৃহস্পতিবার।
১৯৯০ সালের ২৮ নভেম্বর ময়মনসিংহের রাজপথে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেধাবী দুই ছাত্রনেতা শেখ ফিরোজ আহম্মেদ ও জাহাঙ্গীর আলম। তাদের রক্তের পথ বেয়ে স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটে গণতন্ত্র মুক্তি পেলেও চরমভাবে অবহেলিত হয়েছেন এই বীর শহীদরা।
দীর্ঘ ২৯ বছরেও বীরদের হত্যার বিচার করা সম্ভব হয়নি। তাদের স্মরণে কোনো স্মৃতিস্তম্ভও নির্মিত হয়নি। শহীদদের প্রতি এমন অবহেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বজন, সহকর্মী ও তৎকালীন রাজনৈতিক নেতারা।
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সোচ্চার ময়মনসিংহ শহরের প্রতিদিনকার মত ওইদিন সকালে শহরের প্রাণকেন্দ্র মহাকালী গার্লস স্কুলের সামনের রাস্তায় সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে শহীদ হন এই দুই ছাত্রনেতা।
ফিরোজ ছিলেন নাসিরাবাদ কলেজে বিএ ক্লাসের ছাত্র এবং বিপ্লবী ছাত্রসংঘ ময়মনসিংহ জেলা শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক। আর জাহাঙ্গীর ছিলেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং জাসদ ছাত্রলীগ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখার সাধারণ সম্পাদক।
গণতন্ত্র উদ্ধারের গণআন্দোলনে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে স্বৈরাচারের পতন নিশ্চিত করার আন্দোলনকে সফলতার চূড়ান্ত সীমায় নিয়ে যাওয়ার অকুতোভয় বীর দুই শহীদের হত্যাকাণ্ডের ২৯ বছরেও বিচার প্রক্রিয়া শুরুই করা সম্ভব হয়নি। এতে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহীদদের স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও সহযোদ্ধারা।
হত্যা মামলার তৎকালীন আইনজীবী অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত বলেন, জুডিশিয়ালি তদন্তের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ডের সত্যতা পাওয়া গেলেও, অন ডিউটি পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আমলে নিতে সরকারের পূর্বানুমতি লাগে। কিন্তু দঃখজনক হলেও সত্য এরশাদের পতন হওয়ার পর বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেও তারা সেই অনুমতি দেয়নি। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়।
মামলার বাদী তৎকালীন জেলা জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন কালাম বলেন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ময়মনসিংহের এই দুই বীর শহীদ হত্যাকাণ্ডে আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। যারা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দেলনের ফলাফলে সুবিধাভোগী তারাই মামলার পূর্বানুমতি দেয়নি। বিষয়টি ভাবলে আমাদের কষ্ট দেয়।
৯০’র গণআন্দোলনের অন্যতম নেতা তৎকালীন জেলা জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, আমরা শহীদ ফিরোজ-জাহাঙ্গীরের রাজনৈতিক সহকর্মী ছিলাম। নিজেদের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে বলতে চাই আমরা তাদের হত্যার বিচার তো পাইনি বরং তাদের স্মৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য কোনো সৌধ নির্মাণ করতে পারিনি। আমরা লজ্জিত। আমরা মনে প্রাণে চাই শহীদ ফিরোজ-জাহাঙ্গীরের স্মৃতি বেঁচে থাকুক আজীবন। দ্রুত এই দুই বীরের জন্য স্মৃতিসৌদ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
শহীদ ফিরোজ ও জাহাঙ্গীর স্মরণে এই দিনটিতে জাহাঙ্গীর স্মৃতি পরিষদ, জাসদ, কমিউনিষ্ট পার্টি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জেলা নাগরিক আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়ন ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রনেতাদের উদ্যোগে শহীদ ফিরোজ-জাহাঙ্গীর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে।
ময়মনসিংহ/লিমন/সাইফ
from Risingbd Bangla News https://ift.tt/2pWlAMP
0 comments:
Post a Comment