
সারা দেশে উষ্ণতা ছড়ায় গাইবান্ধার শীতবস্ত্র
সিদ্দিক আলম দয়ালপ্রতিদিন খট খট শব্দে ঘুম ভাঙে তাদের। ঘুমাতে যান খট খট শব্দ শুনতে শুনতেই। মাঝে সারাটা দিন কাটে সোয়েটার, মোজা ও কার্ডিগানসহ নানা ধরনের শীতবস্ত্র তৈরি ও সুতা কাটার ব্যস্ততায়।
এসব দৃশ্য গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচাশহর, মহিমাগঞ্জ ও শালমারা ইউনিয়নের ৭০টি গ্রামের। এসব গ্রামের প্রায় ১১ হাজার পরিবারের মানুষের ভালোবাসার উষ্ণতায় তৈরি শীতবস্ত্র উষ্ণতা ছড়ায় সারা দেশে। হোসিয়ারি শিল্পের মাধ্যমে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে ওই এলাকার হাজার হাজার পরিবার।
তবে সুতার দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদনব্যয় বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার উৎপাদনকারীরা। সম্ভাবনাময় হোসিয়ারি শিল্প টিকিয়ে রাখতে ঋণ সহায়তা চান তারা।
এদিকে, অনেক কারখানায় হস্তচালিত কাঠের চরকার বদলে এসেছে মেশিন। এসেছে নতুন যন্ত্রপাতি। পাল্লা দিয়ে চলছে গরম কাপড় তৈরির কাজ।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ জানিয়েছেন,পাকিস্তান আমলে এ এলাকার মহিমা আলী ঢাকা থেকে সোয়েটার বানানো শিখে আসেন। তার হাত ধরেই এ এলাকায় হোসিয়ারি শিল্পের সূচনা। ধীরে ধীরে তা আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে।
হোসিয়ারি শিল্পের সঙ্গে জড়িত আব্দুল কাদের বলেন, ১১ হাজার পরিবারের অধিকাংশ নারী-পুরুষ এ কাজে জড়িত। শিক্ষার্থীরাও পড়ালেখার পাশাপাশি কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। শুধু তাই নয়, আগে যারা অন্য জেলায় পোশাক কারখানায় কাজ করতেন তারা এখন নিজ এলাকায় কাজ করছেন। আশপাশের গ্রামের মানুষ ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে আসেন কাজ করতে।
রোকেয়া বেগম নামের এক নারী জানান, তিনি প্রতিদিন হোসিয়ারি কারখানায় কাজ করে গড়ে ৬০০ টাকা আয় করেন।
কাপড় ব্যবসায়ী মজনু মিয়া বলেন, হোসিয়ারি পল্লিকে কেন্দ্র করে গ্রামের ভেতরে গড়ে উঠেছে হাট। শীতবস্ত্র কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা আসছেন এই হাটে।
স্থানীয় বাসিন্দা আলী আহম্মেদ জানান, এই হোসিয়ারি পল্লিকে কেন্দ্র করে কোচাশহরের এক গ্রামের মধ্যে গড়ে উঠেছে হাট। এই হাটে অন্তত ৯০০ দোকানি আছেন যারা শীতবস্ত্র খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করেন। এই হাটে প্রতি শীত মৌসুমে কয়েক শত কোটি টাকার শীতবস্ত্র বেচাকেনা হয়। কারণ, এখানকার গরম কাপড়ের মান ভালো। দামও কম। এখানকার শীতের পোশাক কিনে নিয়ে যান ঢাকা, কেরানীগঞ্জ, রংপুর, বগুড়া, সৈয়দপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাইকাররা।
তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, কম সুদে ঋণ সহায়তা দেয়া হলে এ শিল্পের আরো প্রসার ঘটবে ।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, এখানকার তৈরি পণ্যের বাজার রয়েছে সারা দেশে। এখানকার নয়ারহাটের নাম এখন মানুষের মুখে মুখে। হোসিয়ারি পল্লির সব সমস্যা সমাধানে শিগগির ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গাইবান্ধা/সিদ্দিক আলম দয়াল/রফিক
from Risingbd Bangla News https://ift.tt/2OpRUkA
0 comments:
Post a Comment