‘বাচ্চাটাকে নিয়ে কী যে করি! সুযোগ পেলেই টিভি দেখতে বসে যায়। শুধু টিভির দিকে মন। পড়াশোনা করতে চায় না।’ সন্তানদের নিয়ে মা-বাবার এমন অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। তাই বলে তো শিশুর টিভি দেখা বন্ধ করা যাবে না। কেননা, শহরকেন্দ্রিক জীবনযাপনে ওদের বিনোদনের অল্প কিছু পথের মধ্যে ওরা টিভি বেছে নেয় খুব সহজেই। এটি পুরোপুরি ওদের দোষ নয়।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শিশুদের অবশ্যই টিভি দেখতে দিতে হবে। প্রতিদিন নিয়ম করে দুই ঘণ্টা টিভি সে দেখতেই পারে। এতে নেশা হয়ে যায় না। অনেক শিশুই স্কুল থেকে ফিরে টিভি দেখে। এটি নিয়েও মায়েরা রাগারাগি করেন। তাই সন্তানকে বুঝিয়ে বলতে হবে। গোসল করে খাওয়ার সময়ও টিভি দেখতে পারবে। তারপর সে বিশ্রাম নিতে যাবে। এ জন্য অভিভাবককে কৌশলী হতে হবে। বকা দিলে, সব সময় ‘না’ বললে শিশুর জিদ বেড়ে যেতে পারে। তখন লুকিয়ে টিভি দেখতে আগ্রহী হবে। পড়াশোনায় মনোযোগী হবে না।
শিশুরা সাধারণত কার্টুন দেখতে পছন্দ করে। সব কার্টুন ওরা দেখে না। ওদের পছন্দেরটা দেখতে চায়। তার বাড়ির কাজ, পড়াশোনা শেষ করলেই সেটি দেখতে পাবে। এমন অলিখিত চুক্তিতে যান। দেখবেন, সন্তান দ্রুত পড়া শেষ করেছে। তবে আপনি কথা রাখবেন। অনেক সময় অভিভাবকেরা কথা রাখেন না। এতে সন্তানেরা কষ্ট পায়, মা-বাবাকে বিশ্বাস করতে চায় না। এ ছাড়া টিভি থেকে দূরে রাখতে চাইলে ওকে খেলতে দিতে হবে। সময়মতো সবকিছু করার অভ্যাস তৈরি করুন। দেখবেন, শিশু নিজেই নিয়মমাফিক চলছে। এমনকি অতিরিক্ত টিভিও দেখছে না। ঢাকার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক আহমেদ হেলাল বলেন, পড়ালেখা, খাবার খাওয়া—দৈনন্দিন কাজগুলোর ব্যাঘাত না করে টিভি দেখতে পারে। কিন্তু টিভিতে কী দেখছে সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কতক্ষণ টিভি দেখল তার থেকে। এমন কিছু যেন না দেখে, যাতে ওর মনোজগতে সমস্যা তৈরি হয়।
শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য বিনোদন জরুরি। তবে এটি যেন টিভিকেন্দ্রিক হয়ে না পড়ে। সারা দিনের সময়টা নিজের মতো করে ভাগ করে নিতে হবে। অভিভাবকেরাও সন্তানের সঙ্গে কথা বলে এটি তৈরি করতে পারেন। এতে করে সন্তানের মতামত প্রকাশ পাবে। সেখানে টিভি দেখার সময়টা অন্তর্ভুক্ত করে দিতে হবে। টিভি দেখা অভ্যাসের বিষয়। চাইলে সারা দিনও দেখা যেতে পারে। এ কারণে সন্তানকে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট বিষয় দেখতে দিন। সে যেন তার উপযোগী অনুষ্ঠান দেখে। অনেক সময় তারা প্রাপ্তবয়স্কদের অনুষ্ঠান দেখতে শুরু করে। রাগ না করে পুরো বিষয়টি তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। একনাগাড়ে অনেকক্ষণ টিভি দেখলে চোখে ক্লান্তি নেমে আসে। ঘুম পায়। পড়ার প্রতি শিশু আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। আধা ঘণ্টার বেশি একনাগাড়ে টিভি দেখা উচিত নয়। তবে অভিভাবকদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সন্তানকে সময় দিতে হবে। ছুটির দিনগুলোতে বেড়াতে নিয়ে যেতে পারেন। গল্পের বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করুন। দেখবেন, সে টিভি দেখার নেশা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। স্কুল থেকেও এমনটি করা যেতে পারে। তারা উদ্যোগী হয়ে সপ্তাহে এক দিন শিক্ষার্থীদের প্রকৃতির কাছে, দর্শনীয় কোনো ঐতিহাসিক স্থানে নিয়ে যেতে পারেন। এতেও শিশুদের একঘেয়েমি কাটবে। তারা পড়াশোনায় উৎসাহ পাবে। টিভি দেখবে। কিন্তু নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়বে না।
Source: prothom-alo.com
0 comments:
Post a Comment