
মার্সেল হা-শো থেকেই আজকের তারকা আরমান
নিজস্ব প্রতিবেদকতিনি আরমান। পুরো নাম কমর উদ্দিন আরনাম। এই সময়ে বাংলাদেশে হাতেগোনা যে ক’জন স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান আছেন তাদের অন্যতম আরমান। কৌতুক বলে সবাইকে হাসানো- এই চর্চাটা তার স্কুল জীবন থেকেই। আর অসাধারণ একটি গানের গলা তার প্রকৃতি প্রদত্ত।
কেবল চর্চা আর অধ্যাবসায়ের কারণেই একের পর এক টপকে গেছেন সাফল্যের সিঁড়ি। ওয়ালটন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মার্সেলের পৃষ্টপোষকতায় কমেডি বিষয়ক রিয়েলিটি শো’র মাধ্যমেই প্রথম লাইম লাইটে আসেন আরমান।
এরপর জি বাংলার রিয়েলিটি শো মিরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে জয় করেন কলকাতাও। বর্তমানে কমেডি আর গানে এখন তার তারকা খ্যাতি। আরমান তার উঠে আসার গল্প শুনিয়েছেন রাইজিংবিডিকে।
আরমানের জন্ম কক্সবাজার জেলার চকরিয়া পৌরসভার বিনামারা গ্রামে। স্কুল জীবনটা গ্রামে কাটলেও কলেজ জীবন থেকে বাসিন্দা চট্টগ্রাম শহরের। আর তার ভেতর কমেডি বা কৌতুক বলে সবাইকে হাসানোর ভুত চেপে বসেছিলো সেই কৈশোর বয়সে স্কুল জীবন থেকেই। একই সাথে গান, বিতর্কসহ নানা সংস্কৃতি চর্চায় আরমানে অবস্থান সবার আগে।
রাইজিংবিডি’র সাথে আলাপকালে আরমান জানান, কখনো স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান বা গানের শিল্পী হবো এই ধরণের কোন প্রস্তুতি, পরিকল্পনা কোনটাই ছিল না। কিন্তু স্কুল থেকেই কমেডি আর গানের ভুতটা যেনো চেপে বসেছিলো মস্তিষ্কে। চকরিয়া কেন্দ্রীয় উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, চট্টগ্রাম শহরের হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ থেকে এইচএসসি এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে রাজনীতি বিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেন আরমান।
আর স্কুল কলেজ জীবন থেকে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়- গান আর কমেডি নিয়ে নিজের চর্চা নিজেই করে গেছেন সমানতালে। বর্তমানে স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান হিসেবে সারাদেশে তারকা খ্যাতি পেলেও শুরুটা গান দিয়ে।
আরমান জানান, এনটিভি’র গান নিয়ে জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ক্লোজ আপ ওয়ানের ৪র্থ আসরে চট্টগ্রাম থেকে অডিশনে অংশ নেন তিনি। এতে চট্টগ্রাম থেকে ইয়েস কার্ড পেয়ে প্রথম গন্তব্য হয় ঢাকা। তবে ঢাকায় গিয়ে এই শো-তে তিনি বেশিদূর এগুতে পারেন নি। বাদ পড়ে যান দুই পর্বে। প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়লেও গান আর কৌতুকের ভুত পিছু ছাড়েনি।
ক্লোজ আপ ওয়ানের পর আরমানের ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট ছিল ওয়ালটন গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান মার্সেলের পৃষ্টপোষকতায় এনটিভি’র কমেডি বিষয়ক রিয়েলিটি শো ‘হা-শো’। হা-শো’র চট্টগ্রাম অডিশনে অংশ নিয়ে কমেডিতে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার টিকেট পেয়ে যান আরমান। এখান থেকেই মূলত কমেডিতে তার পথ চলার সূচনা।
আরমান রাইজিংবিডিকে জানান, মার্সেল হা-শোতে ঢাকায় গিয়ে গ্রুমিং সেশনগুলোই মূলত তাকে পরিপূর্ণ স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান হিসেবে তৈরি করে দেয়। হা-শো’র ওই যাত্রায় আরমান যেতে পেরেছিলেন চার পর্ব পর্যন্ত।
এরপর তিনি হা-শো থেকে বাদ পরে গেলেও দমে যাওয়ার পাত্র ছিলেন না। কমেডিতে তার এগিয়ে যাওয়ার ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিল মার্সেল হা-শো। এই রিয়েলিটি শো থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা আর গ্রুমিং আরমানকে একজন পরিপূর্ণ কমেডিয়ান হিসেবে তৈরি করতে ভূমিকা রাখে।
২০১৬ সালে কলকাতার জি বাংলার কমেডি বিষয়ক ব্যাপক জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো মিরাক্কেল আক্কেল চ্যালেঞ্জারের ঢাকা অডিশনে অংশ নিয়ে কলকাতার টিকেট পেয়ে যান আরমান। এরপর থেকেই তার সাফল্যের অগ্রযাত্রা। জি বাংলায় মিরাক্কেলের প্রতিটি পর্বে আরমানের কমেডি আর গান দুটোই একই সাথে উপস্থাপন করে নিজের মেধা আর যোগ্যতাকে উপস্থাপন করেছেন সাফল্যের সাথে।
মিরাক্কেল একটি কমেডি বিষয়ক রিয়েলিটি শো হলেও বিচারকরা আরমানের কাছ থেকে প্রতি পর্বেই গান শুনতে চাইতেন। জি বাংলায় প্রায় ৪০টি’র বেশি পর্বে মিরাক্কেলে পারফর্ম করে আরমান রিয়েলিটি শো’ এর বিচারক জনপ্রিয় অভিনেতা রজতাভ দত্ত, পরান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শ্রীলেখা মিত্রের নজর কাড়েন, প্রতিপর্বে তাদের মুগ্ধ করেন। কৌতুক আর গানে মাতিয়ে রাখতে সক্ষম হন আরমান তার প্রতিটি পর্ব।
মিরাক্কেলের সেই সিজনের ফাইনালে আরমান সেকেন্ড রানার্স আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। মিরাক্কেলে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় দেশে ফেরার পর মূলত আরমানের তারকা খ্যাতি।
গান আর কমেডিতে দেশব্যাপী সমানভাবে জনপ্রিয় আরমান ২০১৬ সালের জুন মাসে মিরাক্কেল থেকে সাফল্য নিয়ে ফিরে আসেন। এরপর থেকে তার পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দেশ জুড়েই শো করছেন। পারফর্ম করেছেন দেশের বাইরে ইংল্যান্ড এবং সাউথ কোরিয়াতেও। এছাড়া টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি, মাছরাঙা, বাংলাভিশন, দিপ্ত টিভিসহ বিভিন্ন চ্যানেলেও বিভিন্ন প্রোগ্রামে পারফর্ম করেন। সম্প্রতি নাগরিক টিভি’র একটি ধারাবাহিক নাটকেও শিল্পি হিসেবে অভিনয় করেছেন আরমান।
আরমানের জনপ্রিয়তা এখন এমন- দেশের পাঁচ তারকা হোটেলের বলরুম কিংবা খোলা মাঠে উন্মুক্ত দর্শক ভেন্যু, আরমানের শো-মানেই হাজারো দর্শকের উন্মাতাল ধ্বনি।
আরমান জানান, গান আর কমেডিই এখন তার ধ্যান জ্ঞান। পারিবারিকভাবে চিংড়ি ঘেরের ব্যবসার পাশাপাশি দেশব্যাপী শো- নিয়ে ব্যস্ত থাকেন প্রায় প্রতিদিনই। বাবা -মায়ের আট সন্তানের মধ্যে আরমান সবার ছোট। তার বড় এক ভাই ও ছয় বোন রয়েছেন।
সব ধরনের কমেডি পারফরমেন্সে পারদর্শী আরমান মূলত ফোক গান করেন। বিশেষ করে শাহ আবদুল করিম, লালন, বারি সিদ্দিকী, ভানু শেখ-এর প্রচলিত ফোক গানগুলো করে থাকেন স্টেইজ পারফরমেন্সে। একই সাথে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানেও তার পারদর্শিতা রয়েছে।
আরমান জানান, তিনি বিভিন্ন শো-তে স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান হিসেবে আমন্ত্রণ পেলেও মঞ্চে উঠলে দর্শকরা তার কাছে গান এবং কমেডি দুটোই সমানভাবে আশা করেন। তাই দুই ক্ষেত্রেই তিনি দর্শকদের আনন্দ দেন পরিপূর্ণভাবে। গান আর কমেডি নিয়েই আগামীর পথে সাফল্যের সাথে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন আরমান।
চট্টগ্রাম/রেজাউল/বুলাকী
from Risingbd Bangla News https://ift.tt/36lUJKs
0 comments:
Post a Comment