
‘মহাজের’ কলোনির পুকুর ভরাটের চেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদকপরিবেশ আইন লঙ্ঘণ করে জনসাধারণের ব্যবহৃত নগরীর জোড়াগেট সংলগ্ন ‘মহাজের’ কলোনির পুকুর ভরাট চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট জমি নিয়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা চলমান থাকলেও বিষয়টি আমলে না নিয়েই মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ একতরফাভাবে পুকুরটি ভরাট করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উল্লিখিত জমি থেকে ‘মহাজেরদের’ উচ্ছেদ করতেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় ৮০টি পরিবার দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত তাদের পানির উৎস নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন।
অপরদিকে, উল্লিখিত কলোনির পুকুর ও জনসাধারণের বসবাস সংলগ্ন উন্মুক্ত স্থানে বছরের পর বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে সার রাখায় সেখানকার পরিবেশও দুষণ হচ্ছে।
এসব বিষয় প্রতিকার দাবিতে স্থানীয়রা কেসিসি মেয়র, জেলা প্রশাসক ও মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে গণস্বাক্ষরিত আবেদন দাখিল করেছেন। অবিলম্বে এ কার্যক্রম বন্ধ করা না হলে স্থানীয়রা বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
স্থানীয়দের আবেদনের প্রেক্ষিতে খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, পুকুরটি ভরাট করা হলে গোছল ও কাপড় ধোয়াসহ তাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পানির উৎস্য ধ্বংস হবে। এছাড়া পরিবেশ আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জলাধার-পুকুর ভরাটে সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত কয়েকদিন ধরেই বালু ফেলে পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে। বিশাল আয়তনের পুকুরের অধিকাংশই প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। ফলে উন্মুক্ত এ জলাশয়টির স্থায়ী ‘মৃত্যু’ হতে বসেছে।
অপরদিকে, জনসাধারণের বসবাস সংলগ্ন উন্মুক্ত স্থানে বছরের পর বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে হাজার হাজার টন ইউরিয়া সার রাখায় সেখানকার পরিবেশও দুষণ হচ্ছে। সার ধোয়া পানিতে পুকুরের মাছ ও জলজপ্রাণি, হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু এবং গাছপালা মারা যাচ্ছে। এছাড়া বৃদ্ধ এবং নারী ও শিশুরা নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন।
অভিযোগকারীদের পক্ষে শেখ আবুল কালাম, শেখ আইনুল হক, সেখ গোলাম মোস্তফা, শেখ বাহাদুর ও ফাতেমা বেগমসহ অনেকেই বলেন, পুকুরটি ভরাট করা হলে স্থানীয় জনগণের উন্মুক্ত পানির উৎস ধ্বংস হবে। এটি অবিলম্বে বন্ধ করা না হলে তারা বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। এছাড়া পরিবেশ দুষণকারী সারও উন্মুক্ত স্থান থেকে সরানোর দাবি জানান তারা।
সংশ্লিস্ট জমি নিয়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা চলমান থাকার বিষয়টি স্বীকার করে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের এস্টেট অফিসার মো. আবু তাহের রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘কলোনির ৪৯ শতক জমি নিয়ে ১০৩ জন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছে। ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা চলমান থাকলেও এর আগে উচ্চ আদালত এ সংক্রান্ত মামলা খারিজ করে দেন। এ কারণে আমরা ওই পুকুরটি ভরাট করছি। পুকুরের জমিতে বন্দরের একটি কন্টেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ করা হবে।’
উল্লেখ্য, ১৯৫০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার এল.এ কেচের মাধ্যমে ৮ দশমিক ৬৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে ঘর-বাড়ি, মসজিদ, মাদরাসা ও পুকুরসহ প্রয়োজনীয় স্থাপনা তৈরি করে ৮০টি ‘মহাজের’ পরিবারকে পুনর্বাসন করেন। এ পরিবারগুলো ১৯৪৭ সালের পর ভারত থেকে বাংলাদেশে চলে আসে। সিএস ও এসএ রেকর্ডে মালিকানা লাভে দীর্ঘ বছর ধরে এসব পরিবার ওই জমিতে বসবাস করছে। কিন্তু পাশেই মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কলোনি থাকায় তারা ১৯৮২ সালে জোর পূর্বক ‘মহাজেরদের’ উচ্ছেদ করে এ জমি দখল করে নেয়। এর প্রেক্ষিতে ‘মহাজেরদের’ পক্ষ থেকে তৎকালীন উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দাখিল করা হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে রিটকারী চার পরিবারকে ১৯৯৩ সালে ওই জমির দখল বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ‘মহাজেররা’ দৌলতপুর সহকারী জজ ও ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন, যা চলমান রয়েছে।
খুলনা/নূরুজ্জামান/বুলাকী
from Risingbd Bangla News https://ift.tt/2C5Ql4F
0 comments:
Post a Comment