
বানরের আস্থা ঢাকা কলেজে
রায়হান হোসেনপ্রাচীনকাল থেকে মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলে অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সর্বাধিক বানর বসবাস করে আসছে। ঢাকা কলেজ ও যেন বানরের এক আস্থার স্থান। প্রায় দিন সকাল ও দুপুরে ঢাকা কলেজের বিজয় চত্বর, শহীদ মিনার ও পুকুর পাড়ে বানরের আড্ডা দেয়া লক্ষ্য করা যায়।
ইট, পাথরের শহরে যেখানে বানর বিলুপ্তির পথে, ঠিক সেই সময়ে ঢাকা কলেজের মতো একটি লোকারণ্য স্থানে বানরের বসতি, আশ্চর্য হওয়ার বিষয়। এখানকার ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই বানরগুলোকে খাবার দেন, হয়তো এজন্য বানরগুলো ঢাকা কলেজকে তাদের আস্থার জায়গা মনে করে।
বানর এক প্রকারের দুরন্ত প্রাণী। শহরে বড় হওয়া ছেলে-মেয়েরা বন্যপ্রাণী দেখতে অভ্যস্ত না হলেও, তারা যখন ক্যাম্পাসে বানর দেখে, তখন খুব উৎসাহ নিয়ে এদের সাথে মশকরায় মেতে ওঠে। আবার ভালোবেসে খাবার দেয় এবং ছবি তুলে। তারা মনে করে, ঢাকা কলেজ বানরের অভয়ারণ্য। তবে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, ঢাকা কলেজ পরিবারের কেউ বানরগুলোকে বিরক্ত করে না।
অনুমান করা হয়, বানরের উৎপত্তি সুদূর ৩.৫-৪ মিলিয়ন বছর পূর্বে। বানর এক প্রকারের স্তন্যপায়ী প্রাণী। মূলত সিমিয়ান প্রাইমেট গণের তিনটি দলের মধ্যে দুইটির সদস্যরা সাধারণভাবে বানর নামে পরিচিত। এই দলগুলি হলো, নতুন পৃথিবীর বানর, পুরাতন পৃথিবীর বানর এবং নরবানর। এদের প্রধানত দেখা যায় দক্ষিণ এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকায়। বানর বুদ্ধিমান ও সামাজিক জন্তু। অধিকাংশ প্রজাতিই গাছে বাস করে। নিরামিষভোজী হলেও এদের বাসস্থান ও খাদ্যে পর্যাপ্ত বৈচিত্র্য আছে। বাংলাদেশে ১০ প্রজাতির প্রাইমেটের মধ্যে রয়েছে ৫ প্রজাতির বানর। পৃথিবীতে বর্তমানে ১৯ প্রজাতির বানর রয়েছে।

বর্তমানে দুই দলের বানর রয়েছে। যারা হলো, নব বিশ্বের বানর আর পুরাতন বিশ্বের বানর। নব বিশ্বের বানরেরা দক্ষিণ আমেরিকায় বাস করে। পুরাতন বিশ্বের বানরেরা আফ্রিকা এবং এশিয়ায় বাস করে। নব বিশ্বের বানরেরা পুরাতন বিশ্বের বানরদের থেকে ছোট। বানরদের লম্বা হাত ও পা আছে, যার সাহায্যে এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফালাফি করে। যে সব বানরদের লম্বা লেজ আছে, তারা তাদের লম্বা লেজ দিয় গাছে ঝুলে থাকতে পারে। বানরদের প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে ছোট প্রজাতি হলো, পাইগিমিই মারমোসেট। লেজ বাদে এদের দৈঘ্য ১৪ সেন্টিমিটার।
ঢাকা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী আল হাসিব বলেন, ‘বিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান এই সুশীল মানুষ এই বানর প্রজাতি থেকেই আবির্ভূত। সুষ্ঠু চিন্তাশীলতা ও মস্তিষ্কের পূর্ণ বিকাশের প্রতিফলন সৃষ্টির সেরা জীব হলেও শৃঙ্খলা, শান্তিপ্রিয় মনোভাব ও একতা প্রভৃতির দিক থেকে আমাদের তথা মানুষ জাতির অনেক কিছু অবলোকন করার আছে বানরের কাছ থেকে।’
ঢাকা কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী সৈকত হাসান বলেন, ‘সকালে যখন ক্যাম্পাসে ক্লাস করতে আসি, তখন বানরগুলো দেখলে খুব ভালো লাগে । তাছাড়া বন্যপ্রাণীর প্রতি আমার আলাদা একটি মায়া আছে। কারণ, আমার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায়। সেখানেও প্রচুর বানর দেখতে পাই। ক্যাম্পাসে যখন বানর দেখি, তখন মনে হয় আমি গ্রামেই আছি। সেই মায়া থেকেই রুটি কিনে বানরদের খাওয়াই।’
ঢাকা কলেজে বানরের অবাধ বিচরণ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেহানা আক্তার বলেন, ‘বর্তমানে বানর একটি বিলুপ্ত প্রায় প্রাণী। ঢাকা কলেজে যে বানরগুলো আসে, সেগুলো বিজিবি ও নায়মের থেকে আসে। আমাদের হলের ছাত্ররা বানরগুলোকে খাবার দেয়। আমাদের ক্যাম্পাসে প্রচুর গাছপালা রয়েছে, যার জন্য বানরগুলো এই জায়গাটাকে নিরাপদ মনে করে। যে বানরগুলো আমাদের এখানে আসে, তাদের যেন কেউ বিরক্ত না করে, সে ব্যাপারে আমাদের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ বিশেষ নজর রাখবে।’
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।
ঢাকা/রায়হান হোসেন/হাকিম মাহি
from Risingbd Bangla News https://ift.tt/333kBZy
0 comments:
Post a Comment