
নির্মাতা এখন হোটেল বয়: নেপথ্যে কী?
রাহাত সাইফুলনাট্যনির্মাতা অরণ্য পলাশ। লক্ষ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা হবেন। রুপালি স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সঞ্জীবন শিকদারের পথনাটক ‘কই বলল’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাণ করেন ‘গন্তব্য’। সিনেমাটি এরই মধ্যে সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়েছে। কিন্তু নির্মাতার স্বপ্নের এই চলচ্চিত্র গন্তব্য খুঁজে পাওয়ার আগেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ।
‘অর্থাভাবে সিনেমার পরিচালক এখন হোটেল বয়’- এমন শিরোনামের অসংখ্য সংবাদ অর্ন্তজালে ভাসছে। জানা যায়, সিনেমার নেশায় সব বিক্রি করে আজ তিনি নিঃস্ব। জমি ও স্ত্রীর গয়না বিক্রি করেছেন। তাতেও সিনেমার অর্থের জোগান না হওয়ায় সুদে ঋণ নেন। ভেবেছিলেন সিনেমা মুক্তি পেলে হয়তো দিন বদলাবে। কিন্তু তা আর হলো না। এদিকে কোনো আয় না থাকায় প্রতি মাসে যোগ হতে থাকে ঋণের সুদ। পেট চালানোর জন্য দৈনিক ২৫০ টাকা হাজিরা ও তিনবেলা খাওয়ার চুক্তিতে রেস্তোরাঁয় কাজ করছেন তিনি। এই হলো সংবাদভাষ্য।
স্বাভাবিকভাবেই পাঠক এই সংবাদে ব্যথিত হয়েছেন। কিন্তু নেপথ্যের ঘটনা কী? ঠিক কোন কারণে একজন সৃজনশীল মানুষকে হঠাৎ করেই এমন একটি পেশা বেছে নিতে হলো? কারণগুলো জানতে রাইজিংবিডির এই প্রতিবেদক অনুসন্ধান শুরু করেন। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব। আর এই দ্বন্দ্বের বলি ‘গন্তব্য’। আর এ কারণে নির্মাতার স্বপ্ন এখনও অধরা।
‘গন্তব্য’ সিনেমাটি প্রযোজনা করেন এলিনা শাম্মি। অরণ্য পলাশ ও এলিনা শাম্মি সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। সিনেমা প্রযোজনা করতে গিয়ে তাদের ঋণ করতে হয়। ঋণ বাবদ প্রতি মাসে কিস্তি দিতে হতো এলিনা শাম্মিকে। অরণ্য পলাশ ব্যবসা বা চাকরি করতেন না। যে কারণে বাসা ভাড়া থেকে শুরু করে সব খরচ বহন করতেন স্ত্রী এলিনা। এদিকে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতিতে সিনেমাটি নিজের নামে নিবন্ধন করান অরণ্য পলাশ। কিছুদিন পর স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ভাটা পড়ে। তখন নিবন্ধনের অভিযোগ তুলে সিনেমা থেকে সরে দাঁড়ান এলিনা। তারপরই বিপাকে পড়েন অরণ্য পলাশ। বাধ্য হয়ে তাকে হোটেল বয়ের কাজ করতে হচ্ছে। রাইজিংবিডিকে কথাগুলো বলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অরণ্য পলাশ ও এলিনার ঘনিষ্ঠ একজন।
কথাগুলো পুরোপুরি উড়িয়ে না দিলেও কিছুটা সহমত প্রকাশ করেছেন অরণ্য পলাশ। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সিনেমাটিতে এলিনা শাম্মির বিনিয়োগ রয়েছে। এটা আমি কখনো অস্বীকার করিনি। শাম্মিও করেছে আমিও করেছি। এতে আমি প্রযোজক, শাম্মি নির্বাহী প্রযোজক। সে অনেক শ্রম দিয়েছে, চেষ্টা করেছে সিনেমাটিকে আলোর মুখ দেখাতে।’
তাহলে ঠিক কী নিয়ে আপনাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলো? জানতে চাইলে অরণ্য পলাশ বলেন, ‘সিনেমা নিয়ে তার সঙ্গে আমার কোনো জটিলতা নেই। তার জায়গায় সে আছে। আমি যা কিছু করেছি সবকিছু তাকে জানিয়ে করেছি। তবে অনেক পরে জানতে পেরেছি এই সিনেমার প্রযোজক আসলে অন্য আরেকজন। এলিনা শাম্মি প্রযোজক হলেও আমার আপত্তি ছিল না। আমি কি সিনেমার জন্য আমার বাবার পেনশনের টাকা দেইনি? জমি বিক্রি করিনি? আমার বাড়িতে গেলেই দেখতে পাবেন।’
পলাশ আরো বলেন, ‘পরিচালনার পাশাপাশি সিনেমার প্রযোজকও আমি। আমার সর্বস্ব শেষ করে সিনেমাটি নির্মাণ করেছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে সুদে ঋণ নিয়ে, জমি, স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে সিনেমার কাজ শেষ করেছি। অনেক দিন হয় সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্রও পেয়েছি। কিন্তু মুক্তি দেয়ার টাকা আমার কাছে নেই। অভাবের আক্রমণে বিধ্বস্ত আমি। সবাই আমাকে ছেড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে এখন মিরপুরে একটি রেস্তোরাঁয় হোটেল বয়ের কাজ করছি। একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সিনেমাটি বিক্রি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা যা দাম বলছে তা যথেষ্ট নয়।’
এ বিষয়ে কথা বলতে এলিনা শাম্মির মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। জানা যায়, তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন।
‘গন্তব্য’ সিনেমার বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস, আইরিন, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, কাজী রাজু, আফফান মিতুলসহ অনেকে। সিনেমাটির জন্য এসব শিল্পীরাও নামে মাত্র পারিশ্রমিক নিয়েছেন। কেউ কেউ বিনা পারিশ্রমিকে সিনেমায় কাজ করেছেন বলেও জানা গেছে।
ঢাকা/রাহাত সাইফুল/শান্ত/তারা
from Risingbd Bangla News https://ift.tt/2WnwEOW
0 comments:
Post a Comment