
তিন হেভিওয়েট মামলা আপিলে
রাইজিংবিডি.কমমানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় চূড়ান্ত নিস্পত্তি করে সাত মামলার রায় কার্যকর করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রভাবশালী ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আরেক জন আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
এদিকে আপিলে প্রায় তিন বছরের মত ঝুলে থাকার পর তিন হেভিওয়েট মামলা চূড়ান্ত নিস্পত্তি হতে চলছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিল শুনানি শেষে রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে। জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শেষ হওয়ার পথে। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আরেক নেতা আব্দুস সুবহানের আপিল শুনানির জন্য একাধিবার কার্যতালিকায় এসেছে। আগামী অক্টোবর মাসেই শুনানি শুরু হবে বলে জানা গেছে।
এ টি এম আজহার:
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের আপিলের রায় যেকোনো দিন ঘোষণা করবেন সুপ্রিম কোর্ট। গত ১০ জুলাই উভয়পক্ষের শুনানি শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষামাণ রাখা হয়।
এই মামলা নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ট্রাইব্যুনাল সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ ও অন্যান্য নথিপত্র বিচার বিশ্লেষণ করেই মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন। তাই ট্রাইব্যুনালের সাজায় হস্তক্ষেপের কোনো কারণ নেই। আমি আশা করি, ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়টিই আপিল বিভাগ বহাল রাখবেন।
গত ১৮ জুন আপিল দায়ের করার সাড়ে ৪ বছর পর জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের আপিল শুনানি শুরু হয়। ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরধ ট্রাইব্যুনাল-১ একাত্তরে রংপুর জেলা আলবদর বাহিনীর কমান্ডার এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
প্রসিকিউশনের আনা নয় ধরনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে পাঁচটি এবং পরিকল্পনা-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) প্রমাণিত হয় তার বিরুদ্ধে।
এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের রায় আসে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা চালিয়ে অন্তত ১৪০০ লোককে হত্যা এবং ১৪ জনকে খুনের অপরাধে।
এছাড়া ওই অঞ্চলের বহু নারীকে রংপুর টাউন হলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্রে ধর্ষণের জন্য তুলে দেয়ার অভিযোগে একাত্তরের এই বদর কমান্ডারকে ২৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অপহরণ ও আটকে রেখে নির্যাতনের আরেকটি ঘটনায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
ট্রাইব্যুনালের এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি খালাস চেয়ে আপিল করেন জামায়াতে ইসলামীর এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল।
সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার:
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জাতীয় পার্টির সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপিল শুনানি প্রায় শেষের দিকে।
গত ১০ জুলাই প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চে কায়সারের আপিল শুনানি শুরু হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধের দায়ে সৈয়দ কায়সারকে ২০১৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
১৯৭১ সালে দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করে ওই দুই জেলায় যুদ্ধাপরাধে নেতৃত্ব দেন তখনকার এই মুসলিম লীগ নেতা। জিয়াউর রহমানের আমলে তিনি হয়ে যান বিএনপির লোক, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময় জাতীয় পার্টির।
সৈয়দ কায়সার ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন।
আব্দুস সুবহান:
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির মুহাম্মদ আবদুস সুবহানের করা আপিল শুনানির জন্য একাধিক বার কার্যতালিকায় এসেছে।
জানা গেছে, সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপিল শুনানি শেষ হওয়ার পরই আব্দুস সুবহানের আপিল শুনানি শুরু হবে।
২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সুবহানকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। রায়ে সুবহানের বিরুদ্ধে নয়টি অভিযোগের মধ্যে ছয়টি প্রমাণিত হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের ১৮ মার্চ আপিল করেন সুবহান। ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সুবহানকে আটক করে। ২৩ সেপ্টেম্বর তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।
উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এ পর্যন্ত প্রভাবশালী ৬ যুদ্ধাপরাধীর ফাসির রায় কার্যকর হয়েছে। এরা হলেন- মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান,আব্দুল কাদের মোল্লা ও মীর কাসেম আলী।
দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিল নিস্পতি হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তিনি আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
ঢাকা/মেহেদী/সাইফ
from Risingbd Bangla News https://ift.tt/2odDQA5
0 comments:
Post a Comment